,

রাত পোহালেই নবীগঞ্জে ভোট :: নির্বিঘ্ন ভোটে প্রস্তুত প্রশাসন :: নানা সমীকরনে ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনের হালের পরিবেশ!

সেফুর চিংড়ি টপকাতে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে সেলিমের ঘোড়া :: পরগনায় উড়ছে মুকুলের হেলিকপ্টার :: মোটরসাইকেল নিয়ে মরণ কামড় দিচ্ছে সুলতান মাহমুদ

জাবেদ তালুকদার : রাত পোহালেই নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সময় ঘনিয়ে আসলেও হাটে, মাঠে, ঘাটে নেই নির্বাচনের উৎসব। মাঝে মধ্যে মাইকিং প্রচারণা ও প্রার্থীদের শোডাউন হলেও সাধারণ ভোটারদের মাঝে নেই ভোটের আমেজ। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই রয়েছেন ৫ জন। এ যেন আওয়ামী লীগের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী ৩ প্রার্থীর সাথে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু (চিংড়ি)।
বিএনপি’র একটি গ্রুপ নির্বাচন বয়কটের প্রচারণায় মাঠে থাকলেও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ৩ জন প্রার্থীকে একাই নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু (চিংড়ি)। সরাসরি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও মুল লড়াই হবে বিএনপি আওয়ামীলীগের মধ্যেই। আওয়ামীলীগের কাছে থেকে পদ ছিনিয়ে নিতে আধা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপির নেতা কর্মীরা। আওয়ামীলীগের যে প্রার্থীই পাস করেন না কেন মুল লড়াই হবে চিংড়ির সাথে এই আলোচনাই নবীগঞ্জের সর্বত্র।
মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুকে (চিংড়ি) টপকাতে পাল্লা দিয়ে ভোটারদের কাছে দৌড়াচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম (ঘোড়া)। বিশাল ভোট ব্যংক না থাকলেও উপজেলাজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামেই আওয়ামী লীগ ছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু ভোটার এবং গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে তার। দলের তৃনমূল নেতাকর্মীর সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। এর আগে ৮নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ইমদাদুর রহমান মুকুল (হেলিকপ্টার প্রতীক) দীর্ঘদিন ধরে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতিও তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করছেন। দিনারপুর পরগনার ৩টি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪ হাজার ৫শ ভোটার রয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীর মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা তার।
এড. সুলতান মাহমুদ (মোটরসাইকেল প্রতীক) মেষ মুহুর্তে নির্বাচন জমিয়ে তুলেছেন তিনি! উপজেলার সামাজিক ও ক্রীড়া অঙ্গনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। সর্বশেষ কয়েকদিনে নির্বাচনের মাঠে শক্তভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি। এছাড়া তরুণ ভোটারদের মধ্যেও তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। বিশেষ করে ছাত্রলীগ র্কর্মীদের কাছে তার রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। তিনি ছাত্র রাজনীতি করতেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। রাজনীতিতে তার ভালো অবস্থান ও জোড়ালো সমর্থন রয়েছে।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদেও একই অবস্থা। বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশের (মাইক) সঙ্গে লড়ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ (তালা) একই দলের ৪ প্রার্থী। এ পদেও আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি’র আব্দুল আলীম ইয়াছিনী (টিয়া পাখি)। বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার সখ্যতা কাজে লাগাতে পারলে চমক দেখাতে পারেন তিনিও।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগমের (হাঁস) সঙ্গে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ছাইফা রহমান কাকলী (ফুটবল)।
চেয়ারম্যান পদে আরও মাঠে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন বুলবুল (দোয়াত-কলম), জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী (আনারস), মোস্তফা কামাল (কাপ-পিরিচ) ও পল্লী চিকিৎসক শাহ আবুল খায়ের (কৈ মাছ)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরও মাঠে রয়েছেন- জাপা নেতা মুরাদ আহমদ (চশমা), যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা অনর উদ্দিন জাহিদ (উড়ো জাহাজ), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সালমান আহমদ (বৈদ্যুতিক বাল্ব), মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান (বই), হেলাল চৌধুরী (আইসক্রিম) ও রুবেল তালুকদার (টিউবওয়েল)।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সকল ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জিলুফা সুলতানা বলেছেন, নবীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য আইন সমান থাকবে। নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ-বিশৃংখলা-অনিয়ম ও জালিয়াতি বরদাশত করা হবে না। আইন হাতে তুলে নিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা একটি দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চাই।
পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন (বিপিএম সেবা) বলেন, ভোট হবে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। কোন ভোটারকে কেউ কেন্দ্রে আসতে বাধা দিলে তাকে কঠোর হাতে দমন করবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটের দিন পুরো উপজেলা নিরাপত্তার চাঁদরে মোড়ানো থাকবে। কেউ বিশৃংখলা সুষ্টির চেষ্টা করলে হাসপাতাল অথবা কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর